কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর কার্যাবলী আজকের ক্লাসের আলোচ্য বিষয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তার কার্যাবলী [ Central Bank and its functions ] ক্লাসটি এসএসসি বা ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর [ SSC Class 9 10 ], অর্থনীতি [ Economics ] বিষয়ের ৭ম অধ্যায় [ Chapter 7 ], অর্থ ও ব্যাংক-ব্যবস্থা [Finance & Banking System] এর পাঠ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর কার্যাবলী
কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইংরেজি: ‘Central Bank’, কখনো কখনো রিজার্ভ ব্যাংক (Reserve Bank), বা আর্থিক কর্তৃপক্ষ (Monetary Authority) নামেও পরিচিত) হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যারা কোন একটি দেশের মুদ্রা, অর্থ সরবরাহ এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কেন্দ্রীয়- ব্যাংক একটি দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান।দেশের সার্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে বলেই এর নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত তাদের নিজ নিজ দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকিং পদ্ধতির তত্ত্বাবধায়ক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিপরীত কর্মপদ্ধতি হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির একটি একচেটীয়া প্রকৃতির প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এবং দেশের জাতীয় মুদ্রা ছাপে।কেন্দ্রীয়- ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত মুদ্রাই দেশের’বিহিত মুদ্রা’। যা সাধারণত দেশের আইনত: কার্যকলাপ হিসাবে পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় -ব্যাংকের কাজ হল মুদ্রা তৈরি করা।বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংক সরকারের প্রতিনিধি ও আর্থিক পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় -ব্যাংককে বাধ্যতামূলকভাবে কতিপয় বিধিবন্ধ বা সাধারণ কার্য সম্পাদন করতে হয় । যেমন -:
সাধারণ কার্যাবলি:
১. নোট ও মুদ্রা প্রচলন : কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের কাগজি নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলনের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সম্পাদনের জন্য কী পরিমাণ নোট ও মুদ্রার প্রয়োজন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা নির্ধারণপূর্বক সেই পরিমাণ নোট সরকারের অনুমতিক্রমে ইস্যু করে থাকে। তবে নোটের বিপরীতে আইন অনুযায়ী সোনা, রূপা ও বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করতে হয়। দেশের অর্থনৈতিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নোট ইস্যু করা এবং নোটের বিপরীতে ব্যাংকের নিরাপত্তা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখতে হয় বলে কেন্দ্রীয় -ব্যাংক ইচ্ছামাফিক নোট প্রচলন করতে পারে না।
২. মুদ্রার মান সংরক্ষণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ও মুদ্রা প্রচলনের পাশাপাশি মুদ্রার মান সংরক্ষণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে । কেন্দ্রীয় -ব্যাংক হলো এমন একটি ব্যাংক যার প্রধান দায়িত্ব হলো মুদ্রার মান সংরক্ষণ করা । কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে অর্থ সরবরাহ হ্রাস-বৃদ্ধি করে অর্থের ক্ষমতা সংরক্ষণের মাধ্যমে মুদ্রার মান বজায় রাখে ।
৩. ঋণ নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় -ব্যাংক বিভিন্ন কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মুদ্রাস্ফীতি কাম্যমাত্রায় বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । কারণ অতিরিক্ত ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই কেন্দ্রীয়- ব্যাংক ঋণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল হিসেবে ব্যাংক হার নীতি, খোলাবাজার নীতি, জমার হার পরিবর্তন নীতি, ঋণের বরাদ্দকরণ নীতি ইত্যাদি ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণদান ক্ষমতা হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে বাজারে ঋণের প্রবাহ তথ্য ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

৪. মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় -ব্যাংক দেশের মুদ্রাবাজারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। মুদ্রাবাজার হলো এমন একটি স্বল্পমেয়াদি অর্থ সংগ্রহের বাজার যেখান থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি (১ বছর বা তার কম সময়) অর্থসংস্থান করতে পারে। যে মুদ্রাবাজার যতবেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সে দেশ শিল্পে ও বাণিজ্যে ততবেশি উন্নত।
৫. বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রার বৈদেশিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দেশীয় মুদ্রার সম্মানজনক বিনিময় হার সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রীয়- ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বা আগমন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কাম্যন্তরে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়।
৬. ব্যাংক ব্যবস্থার উন্নয়ন : দেশের শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় -ব্যাংক দেশে নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও নতুন নতুন শাখা খোলার অনুমতি প্রদান করে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার সেবা ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তার কার্যাবলী নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও পড়ূনঃ