[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

বাণিজ্যিক ব্যাংক

বাণিজ্যিক ব্যাংক আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি” এর  “অর্থ ও ব্যাংক ব্যবস্থা” সপ্তম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

 

বাণিজ্যিক ব্যাংক

 

যে ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আমানত হিসেবে জমা রাখে এবং ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন। এ ব্যাংক আমানতকারীর জমাকৃত অর্থের উপর কম হারে সুদ দেয়। অন্যদিকে ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি হারে সুদ আদায় করে ।

উভয় সুদের পার্থক্যই হলো ব্যাংকের মুনাফা। এ ব্যাংক জমাদানকারীকে তার জমাকৃত অর্থ চাওয়ামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে বলে ব্যাংক তার তহবিল থেকে স্বল্পকালের জন্য ঋণ প্রদান করে। তাই এ ব্যাংককে স্বল্পমেয়াদী ঋণের ব্যবসায়ি বলে। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হলো: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক, ডাচ্‌ বাংলা ব্যাংক ইত্যাদি ।

 

 

বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলি

আধুনিককালে বাণিজ্যিক ব্যাংক বহুমুখী কার্য সম্পাদন করে রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে । নিম্নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :

 

১. আমানত গ্রহণ 

বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আমানত সংগ্রহ করা। বাণিজ্যিক ব্যাংক তিন ধরনের আমানত গ্রহণ করে। যথা- (ক) চলতি আমানত, (খ) সঞ্চয়ী আমানত, (গ) স্থায়ী আমানত ।

(ক) চলতি আমানত : চলতি আমানতের অর্থ আমানতকারী যেকোনো সময় ওঠাতে পারেন। এজন্য এ আমানতের উপর কোনো সুদ প্রদান করা হয় না ।

(খ) সঞ্চয়ী আমানত : সঞ্চয়ী আমানতের অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় মেয়াদে সাধারণত সপ্তাহে দুবার ওঠানো যায় । এই আমানতের উপর ব্যাংক কিছু সুদ দেয় ।

(গ) স্থায়ী আমানত : এ আমানত নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হয়। যেমন— ৩ মাস, ৬ মাস, ১ বছর, ৩ বছর, ৫ বছর ইত্যাদি। ব্যাংক এ ধরনের আমানতের উপর অধিক হারে সুদ প্রদান করে থাকে । এ আমানতের অর্থ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেও তোলা যায়। এক্ষেত্রে কিছু বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হয়।

 

২. ঋণ দান করা

বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ আমানতকারীর চাহিদা মেটানোর জন্য গচ্ছিত রেখে বাকি অর্থ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য ঋণ প্রদান করে । উপযুক্ত জামানত ও বন্ধকির যেমন- মূল্যবান ধাতু, ধাতব দ্রব্য, সরকারি ও দেশি-বিদেশি ঋণপত্র, স্থায়ী সম্পদ ইত্যাদি এর বিপরীতে বাণিজ্যিক -ব্যাংক ঋণ প্রদান করে । আমাদের দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক গৃহনির্মাণ, মৎস্য চাষ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ঋণ দেয় ।

 

৩. বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি

বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক সহজ বিনিময় মাধ্যম হিসেবে চেক, ব্যাংক ড্রাফট, ই-পেমেন্ট, হুন্ডি ও ভ্রমণকারীর চেক ইত্যাদি সৃষ্টি করে । বিনিময় মাধ্যমগুলোর মধ্যে ব্যাংকের ইস্যুকৃত চেক বহুল ব্যবহৃত হয় । উন্নত দেশে অধিকাংশ লেনদেনই চেকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে ।

 

 

৪. দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সহায়তা

বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্যের সহায়তায় ব্যবসায়ীদের অর্থ যোগান দেওয়ার পাশাপাশি পরামর্শও দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিনিময় বিলে স্বীকৃতি প্রদান, বিল বাট্টাকরণ, আমদানি ও রপ্তানিকারককে ঋণ প্রদান, মেইল ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে দ্রব্য আদান-প্রদান, বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেনা-পাওনার নিষ্পত্তি হয়। এসব কার্য সম্পাদন করে বাণিজ্যিক -ব্যাংক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

 

৫. অর্থ স্থানান্তর

গ্রাহকদের প্রয়োজনে ব্যাংক এক স্থান হতে অন্য স্থানে নিরাপদে ও দ্রুত অর্থ প্রেরণ করে । অর্থ প্রেরণের মাধ্যম হলো চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পোস্টাল অর্ডার, ভ্রমণকারীর চেক, মেইল ট্রান্সফার ও টেলিগ্রাম প্রভৃতি ।

 

৬. রেমিট্যান্স

বিদেশে কর্মরত সকল জনসাধারণের বৈদেশিক আয় সংগ্রহ করে এবং দেশীয় সংশ্লিষ্ট মালিককে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা হস্তান্তর করে বাণিজ্যিক ব্যাংক যথাযথ সেবা প্রদান করে ।

 

৭. সঞ্চয় বৃদ্ধি

বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে । ব্যাংক সঞ্চিত অর্থ ব্যবসায় ও উৎপাদন ক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে । এভাবে বাণিজ্যিক -ব্যাংক দেশের সঞ্চয় বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদন করে-

(ক) জনগণের মূল্যবান জিনিসপত্র, যেমন- দলিলপত্রাদি ও মূল্যবান অলংকার ইত্যাদি নিরাপদে লকারে জমা রাখে ।

(খ) বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, মেয়াদি ঋণপত্র (Debenture) ও সরকারি বণ্ড ক্রয়-বিক্রয়ে সহায়তা করে ।

(গ) সম্পত্তি দেখাশোনা, সম্পত্তির কর আদায় ও প্রদানের ব্যবস্থাপূর্বক অছির দায়িত্ব পালন করে ।

(ঘ) গ্রাহকদের স্বার্থে আর্থিক সচ্ছলতার সনদপত্র প্রদান করে ও গোপনীয়তা রক্ষা করে ।

(ঙ) গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে চেক, বিনিময় বিল, বাড়িভাড়া, আয়কর, বীমার প্রিমিয়াম এবং বৈদ্যুতিক বিল ইত্যাদি সংগ্রহ ও প্রদান করে ।

উপরিউক্ত কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক- ব্যাংক একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

 

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment