[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

বেকারত্বের সংজ্ঞা

বেকারত্বের সংজ্ঞা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি” এর  “বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রসঙ্গ” নবম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।

 

বেকারত্বের সংজ্ঞা

কাজ করতে সক্ষম ব্যক্তি প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু কাজ পায় না- এ অবস্থাকেই বেকারত্ব বলে। একজন বেকারের মধ্যে নিচের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

(১) মজুরিভিত্তিক কোনো কাজ পায় না,

(২) প্রচলিত মজুরিতে কাজ করতে ইচ্ছুক,

(৩) আয় উপার্জন থেকে বঞ্চিত,

(৪) আর্থিক ও মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে ।

 

বেকারত্ব

 

বেকারত্বের প্রকৃতি (Types of Unemployment)

১. মৌসুমি বেকারত্ব :

প্রাকৃতিক কারণে বছরের কোনো বিশেষ বিশেষ সময়ে এ ধরনের বেকারত্ব হয় । যেমন ফসল বপন ও কর্তনের সময় ব্যতীত অন্যান্য সময়ে গ্রামীণ কৃষি শ্রমিকের কোনো কাজ থাকে না । অর্থাৎ বছরের যে সময় কৃষি শ্রমিক কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়, সে সময়ের জন্য ঐ শ্রমিককে মৌসুমি বেকার বলে ।

২. ছদ্মবেশী/প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব :

কৃষি খাতে আপাতদৃষ্টিতে অনেক লোক কাজ করছে বলে মনে হয় । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কৃষিকাজে নিযুক্ত ঐসব লোকের মধ্যে অনেকেরই প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা শূন্য । প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা শূন্যবিশিষ্ট লোককে প্রচ্ছন্ন বেকার বা ছদ্মবেশী বেকার বলে । যেমন ধরা যাক, একজন কৃষকের দুই বিঘা জমি আছে। সে একাই ঐ জমিতে চাষবাস করে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসল উৎপাদন করে । এখন যদি তার দুই ছেলে বাবার সঙ্গে ঐ জমিতে চাষের কাজে নিযুক্ত হয় তাহলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে তিনজন লোক কাজে নিযুক্ত রয়েছে ।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যাবে ঐ কৃষক একা যা উৎপাদন করত, দুই ছেলেসহ উৎপাদনের পরিমাণ একই হয় । অতএব দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত দুজন লোকের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা শূন্য। এর কারণ হলো তিনজন লোক একজনের কাজকে ভাগ করে নিচ্ছে । সুতরাং এই দুজন শ্রমিককে প্রচ্ছন্ন বেকার বলে অভিহিত করা হয় । তাহলে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব হলো সেই অবস্থা যেখানে শ্রমিক আপাতদৃষ্টিতে কাজ করছে বলে মনে হয়, কিন্তু তার প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা শূন্য ।

৩. সাময়িক বেকারত্ব :

পেশা পরিবর্তনের সময়ে যে বেকারত্ব তৈরি হয়, তাকে সাময়িক বেকারত্ব বলা হয় । যেমন, একজন গার্মেন্টস শ্রমিক পেশা পরিবর্তন করে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করে। এ সময় যে কয় দিন সে কর্মহীন থাকে, এ সময়কালটা সাময়িক বেকারত্ব বলে গণ্য হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের বেকারত্ব লক্ষ করা যায় ।

সুতরাং বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে জনসাধারণের কৃষিকাজ ব্যতীত অন্য কাজ কম থাকায় উপরিউক্ত বিভিন্ন ধরনের বেকারত্ব দেখা দেয় ।

 

বেকারত্ব নিরসন (Reduction of Unemployment):

বেকার সমস্যা সমাধান করতে কৃষি ও অকৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রয়োজন। কৃষিক্ষেত্রে সেচব্যবস্থার উন্নতি, বহু ফসলি চাষাবাদ এবং কৃষিভিত্তিক নানা কাজকর্ম যেমন- গবাদিপশু পালন, বনায়ন, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ প্রভৃতি ক্ষেত্রে নতুন নতুন কর্ম সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে । অকৃষিক্ষেত্রে গ্রামীণ রাস্তাঘাট নির্মাণ, গ্রামীণ গৃহ নির্মাণ, পুকুর সংস্কার, খাল সংস্কার, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, ছোট খাটো ব্যবসায়- বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে কাজের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এসব ছাড়াও বেকারত্ব নিরসনের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যায় ।

 

বেকারত্বের সংজ্ঞা

 

১. ছদ্মবেশী বেকারত্ব নিরসন :

অনুন্নত দেশের কৃষিব্যবস্থায় ছদ্মবেশী বেকারত্ব বিদ্যমান। কৃষি খাতের শ্রমিকের মজুরির চেয়ে শিল্প খাতে শ্রমিকের মজুরি বেশি প্রদান করলে শিল্প খাতে শ্রমিকের যোগান বৃদ্ধি পায় । আর কৃষি খাত থেকে উদ্বৃত্ত বেকার শ্রমিক শিল্প খাতে স্থানান্তর হয়। এই পদ্ধতিতে আমরাও বাংলাদেশে ছদ্মবেশী বেকারত্ব দুর করতে পারব।

২. মূলধন বিনিয়োগ ও বেকারত্ব নিরসন :

উন্নয়নশীল দেশে বেকারত্ব নিরসনে নির্দিষ্ট পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ দ্বারা প্রথমে শিল্পের উন্নয়ন ও পরবর্তী সময়ে শিল্পের যান্ত্রিক কৌশলগত উন্নয়ন করলে শ্রমিকের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং শ্রমিক নিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে বাংলাদেশেও বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

৩. কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের জন্য গ্রামীণ ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন :

কৃষি খাতে যে সকল ছোট যন্ত্রপাতির দরকার হয় এগুলো কৃষিভিত্তিক অতি ক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র শিল্পে প্রস্তুত করা যায় । আর এ ধরনের শিল্প গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করে গ্রামীণ বেকারত্ব দূর করা যায় ।

৪. গ্রামীণ ব্যবস্থায় কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন :

কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠা করলে একদিকে শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং আরও অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে । মোট কথা দেশের বেকারত্ব নিরসন হবে ।

৫. কৃষিজমিতে বহু ফসল উৎপাদন-ব্যবস্থা :

বাংলাদেশের সমগ্র এলাকায় মৌসুমি ফসল ব্যতীত মাঝখানে অন্য ফসল উৎপাদন বা কৃষিজমিতে একটি ফসল উত্তোলনের পর অন্য ফসল করার উদ্যোগ নিলে কৃষি শ্রমিক বেকার থাকবে না ।

৬. ফসলবহির্ভূত কৃষি :

বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে নদী-নালা, খাল-বিল, নিচু জমি রয়েছে । এসব জায়গায় বিভিন্ন জাতের মৎস্য চাষ করা যায়। আর উঁচু অথচ ফসল হয় না এমন জায়গায় হাঁস-মুরগির খামার করে বছরের সব সময় কাজ করার সুযোগ হয় ।

৭. অর্থনৈতিক চাহিদার সাথে কর্মমুখী বাধ্যতামূলক শিক্ষানীতি গ্রহণ :

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে । কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে নিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বাস্তবভিত্তিক ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে । দেশের প্রতিটি জেলায় কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করে স্বল্প শিক্ষিত বেকারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজস্ব ব্যবস্থায় কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা যায় ।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৮. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণসুবিধা :

গ্রামীণ অর্ধ শিক্ষিত বেকারদের ভোকেশনাল ট্রেনিং প্রদানের পর তাদেরকে আর্থিক ঋণসুবিধা প্রদান করলে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার, গবাদিপশু খামারের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসন করা যায় । আবার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমেও গ্রামীণ বেকারত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব ।

 

আরও পড়ূনঃ

Leave a Comment