সংগঠনের প্রকারভেদ ক্লাসটি এইচএসসি বা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনী [ HSC Class 11-12 ], অর্থনীতি ১ম পত্র [ Economics First Paper ] বিষয়ের, ৭ম অধ্যায় [ Chapter 7 ] এর পাঠ। এইচএসসি বা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনী [ HSC Class 11-12 ], অর্থনীতি [ Economics ] এর আরও ক্লাস পেতে যুক্ত থাকুন “অর্থনীতি গুরুকুল [ Economics Gurukul ]” এর সাথে।
Table of Contents
সংগঠনের প্রকারভেদ
‘Organising’ শব্দটি ‘Organism’ থেকে এসেছে; এর অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে কতগুলো পৃথক অংশকে এমনভাবে সমন্বিত করা যার কারণে প্রত্যেকটি অংশের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে কোনো কিছুর সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে, দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি প্রণালীকে সংগঠন বলা যায়।
সংগঠনকে প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা-
- ১. আনুষ্ঠানিক সংগঠন (Formal Organisation)
- ২. অনানুষ্ঠানিক সংগঠন (Informal Organisation)
- ৩. কমিটি (Committee)
১. আনুষ্ঠানিক সংগঠন (Formal Organisation)
প্রতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মনীতির গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ থেকে প্রতিষ্ঠানের নিম্নস্তর থেকে শীর্ষস্তর পর্যন্ত কর্তৃত্বের বা আদেশের যে শিকল প্রস্তুত (chain of command) করা হয় তাকেই আনুষ্ঠানিক সংগঠন বলা হয়। এখানে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, কে কার নিকট দায়ী থাকবে এবং জবাবদিহি করবে তার রুপরেখা, কে কার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে তার নিয়মকানুন, কর্মীদের দায়িত্ব ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসে সব কিছুই এ সংগঠনে উপস্থিত থাকে। এখানে একজন কর্মী ইচ্ছা করলেই তার উপরস্থ নির্বাহীকে বাদ দিয়ে আরো উপরের স্তরের নির্বাহীর সাথে আলাপ করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
এই সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত সবাইকে নির্ধারিত দায়িত্ব সবাইকে অবশ্যই পালন করতে হয়। দায়িত্বের অবহেলার জন্য শাস্তির বিধান থাকে। নানারকম আনুষ্ঠানিক সংগঠন যেমন সরলরৈখিক, কার্যভিত্তিক, সরলরৈখিক ও উপদেষ্টা সংগঠন ইত্যাদি একটি প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়।
আনুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রকারভেদ
আনুষ্ঠানিক সংগঠনকে নিম্নোক্ত কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
- i. সরলরৈখিক সংগঠন (Line Organisation)
- ii. সরলরৈখিক ও উপদেষ্টা সংগঠন (Line and Staff Organisation)
- iii. কার্যভিত্তিক সংগঠন (Functional Organisation)
- iv. কমিটি (Committee)
২. অনানুষ্ঠানিক সংগঠন (Informal Organisation)
কোনোরূপ আনুষ্ঠানিক প্রথা ছাড়াই সংগঠনের কর্মী ও নির্বাহীদের ব্যক্তিগত মেলামেশলা, খেয়াল-খুশি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা পছন্দ-অপছন্দ থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে যে সম্পর্ক বা যৗথ উদ্যোগ গ্রহণের প্রবণতা সৃষ্টি হয় তাকেই অনানুষ্ঠানিক সংগঠন বলা হয়। এই অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক নির্বাহীদের মধ্যে, শ্রমিকদের মধ্যে কিংবা শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সচেতন বা
অবচেতন ভাবে গড়ে ওঠে। বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের মধ্যে উপদল গঠনের প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণতঃ আঞ্চলিক, সাম্প্রদায়িক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক চিন্তাধারা বা আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে অনানুষ্ঠানিক সংগঠন গড়ে ওঠে। সংগঠনিক কাঠামোতে অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের উল্লেখ না থাকলেও অনেক সময় উদ্দেশ্য অর্জনের ব্যাপারে এবং অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান করার ব্যাপারেও অনানুষ্ঠানিক সংগঠন খুবই সহায়ক হয়।
অনানুষ্ঠানিক সংগঠনের প্রকারভেদ
প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের অনানুষ্ঠানিক সংগঠন গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন:
- i. বন্ধুত্বসুলভ অনিয়মতান্ত্রিক সংগঠন;
- ii. কর্ম গোত্রভুক্ত অনিয়মতান্ত্রিক সংগঠন;

৩. কমিটি (Committee)
কমিটি বা পর্ষদ হচ্ছে একাধিক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন যার ওপর কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রশাসনিক দায়িত্ব বা কোনো কার্যভার অর্পিত হয়। বর্তমান জগতে সব ধরনের সহযোগিতামূলক কর্মকান্ডে এটা ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত
হচ্ছে। বস্তুত: কমিটিকে গণতন্ত্রের একটি বিশেষ দিক হিসেবে চিহ্নিত করাহয়। কমিটিকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়ে তাকে। টিম (Team), পর্ষদ (Board), টাস্ক ফোর্স (Task Force), কমিশন (Commission), পরিষদ (Union) ইত্যাদি হচ্ছে কমিটির বিভিন্ন রূপ।
প্রসিদ্ধ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে কমিটির কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলো:
- প্রফেসর ডব্লিউ, এইচ নিউম্যান (W. H. Newman)-এর মতে, “কমিটি হলো একদল লোকের সমষ্টি যাদের ওপর নির্দিষ্টভাবে প্রশাসনিক কাজ সম্পাদনের ভার ন্যস্ত করা হয়।”
- ওইইরিচ ও কুঞ্জ (Weihrich and Koontz) বলেন, ‘কমিটি হলো কতিপয় ব্যক্তি সমষ্টি যাদেরকে দলবদ্ধভাবে তথ্য সরবরাহ পরামর্শ প্রদান, ধারণার বিনিময় অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে দায়িত্ব অর্পন করা হয়।”
সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কতিপয় বিশিষ্ট কর্মকর্তাকে নিয়ে কমিটি গঠিত হয়। কমিটি সমিষ্টিগতভাবে কাজ করে এবং কার্য সম্পাদনের জন্য সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে মতামত বিনিময় করেন। শুধু কমিটির দায়িত্ব পালন কোনো সদস্যের মুখ্য কাজ নয়; প্রত্যেক সদস্যেরই নিজ নিজ দায়িত্ব থাকে যা তাদের প্রধান কাজ বলে গণ্য হয়। আর এই মূল দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকে সস্যরা কমিটির দায়িত্ব পালন করেন। কমিটির উপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের সুবিধার্থে সদস্যদের একজনকে সভাপতি বা আহ্বায়ক মনোনিত করে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
উপরের আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, কমিটি হলো বিশেষভাবে নির্বাচিত বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনিত এমন কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সমষ্টি যাদের ওপর বিশেষ কোনো প্রশাসনিক কাজ বা দায়িত্বভার অর্পন করা হয় এবং যারা সু-সংগঠিত ভাবে মিলিত হয়ে আলাপ আলোচনা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, একটি কমিটি অবশ্যই একাধীক ব্যক্তি নিয়ে গঠিত হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সমস্যা তদন্তের জন্য “এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি” গঠন করা হয়ে থাকে। এটা ব্যবস্থাপনার দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো প্রকার কমিটির আওতায় পড়ে না।
সংগঠনের প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত ঃ
আরও পড়ূনঃ