উপযোগ, ভোগ ও ভোক্তা আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি” এর “উপযোগ, চাহিদা, যোগান ও ভারসাম্য” তৃতীয় অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
উপযোগ, ভোগ ও ভোক্তা
উপযোগ : ব্যক্তির বেঁচে থাকার জন্য অনেক দ্রব্য-সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। খাবার সামগ্রী, পরিধানের সামগ্রীসহ অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। এগুলো না থাকলে আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারি না। যেমন-খাদ্য, বস্ত্র, বইপত্র, ডাক্তারের সেবা প্রভৃতি দ্রব্য ও সেবা ব্যক্তি মানুষের অভাব মেটায়। অতএব,অর্থনীতিতে উপযোগ বলতে কোনো দ্রব্যের বা সেবার দ্বারা ব্যক্তির অভাব পূরণের ক্ষমতাকে বোঝানো হয়। উপযোগ একটি ব্যক্তিগত মানসিক ধারণা ।
ভোগ : প্রতিদিন আমরা ভাত, মাছ, কলম, ঘড়ি, জামা-কাপড় ব্যবহার করি বা এগুলো আমরা ভোগ করি । এখানে ভোগ বলতে কিন্তু এগুলো নিঃশেষ করাকে বোঝায় না। কেননা আমরা কোনো জিনিস ধ্বংস বা নিঃশেষ করতে পারি না। আমরা শুধু দ্রব্যগুলো ব্যবহারের দ্বারা এর উপযোগ গ্রহণ করতে পারি । খেয়াল রাখতে হবে, অভাব মোচন ছাড়া অন্য কোনোভাবে দ্রব্যের উপযোগ ধ্বংস করা হলে তাকে ভোগ বলা হবে না। যেমন: আগুনে আমার কাপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অতএব, অর্থনীতিতে মানুষের অভাব পূরণের জন্য কোনো দ্রব্যের উপযোগ নিঃশেষ করাকে ভোগ বলা হয় ।
ভোক্তা : যে ব্যক্তি ভোগ করে তাকে আমরা ভোক্তা বলি। বাজার অর্থনীতিতে কোনো অবাধ সহজলভ্য দ্রব্য ছাড়া অন্য সব দ্রব্য ভোগ করার জন্য যে ব্যক্তি অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত থাকে, তাকে ভোক্তা বলা হয় ।
মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগ (Total Utility and Marginal Utility)
মোট উপযোগঃ বাজারে গিয়ে তুমি খাওয়ার জন্য একাধিক আম কিনতে চাও। ১ম আমটি কিনতে তুমি যে টাকা ব্যয় কর ২য়, ৩য় বা ৪র্থ বার আম ক্রয় করতে তা কর না । কারণ ১ম আমটি ভোগ করার পর তোমার আম খাওয়ার অভাব অনেকটা পূরণ হয়ে যায়। ২য় বার আমের প্রতি তোমার আকাঙ্ক্ষা বা আগ্রহ কমে যায় । ৩য়, ৪র্থ আমের ক্ষেত্রে আগ্রহ আরও কমবে । এমন হতে পারে যে, তুমি আর আম কিনবে না । কারণ আম খাওয়ার প্রতি সে সময়ে তোমার আর কোনো আগ্রহ থাকে না বা তোমার কাছে অতিরিক্ত আমের উপযোগ শূন্য । আম ক্রয় করতে তোমাকে টাকা ব্যয় করতে হয় ।
ধরি, ১ম আমটি তুমি কিনলে ৫ টাকায়, ২য় আমটি কিনতে তুমি ৪ টাকা দিতে রাজি থাকো, ৩য় আমের জন্য ৩ টাকা দিতে চাও এবং ৪র্থ আমের জন্য ২ টাকা । এভাবে (৫ + ৪ + 3 + 2) = ১৪ টাকা দিয়ে তুমি ৪টি আম কিনলে । টাকাকে উপযোগের মাপকাঠি ধরলে এখানে ৪টি আমের মোট উপযোগ ১৪ । অতএব, কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত তৃপ্তির সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে । যেহেতু অতিরিক্ত আম থেকে ক্রমান্বয়ে কম তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেহেতু ভোগের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে মোট উপযোগ ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে ।
প্রান্তিক উপযোগঃ মনে কর তুমি ৩টি আম কিনেছ । এখন তুমি আবার আরেকটি আম কিনলে । এই অতিরিক্ত ৪র্থ আমটি হলো প্রান্তিক আম । এই প্রান্তিক আম থেকে তুমি যে তৃপ্তি বা উপযোগ পেলে,তাই প্রান্তিক উপযোগ । এই আম কিনতে তুমি ২ টাকা ব্যয় করলে এখানে প্রান্তিক উপযোগ হবে ২ টাকার সমান । অর্থাৎ অতিরিক্ত এক একক দ্রব্য বা সেবা ভোগ করে যে অতিরিক্ত উপযোগ বা তৃপ্তি পাওয়া যায়,তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে ।
সূচির মাধ্যমে মোট উপযোগ ও প্রান্তিক উপযোগের উপস্থাপন

উপরের সূচিতে দেখা যায়, ১ম আমের দাম যখন ৫ টাকা প্রান্তিক উপযোগ তখন ৫ টাকা । ২য় আম কেনায় ১ম ও ২য় আমের ব্যয় ৯ টাকা । দুটি আম থেকে প্রাপ্ত মোট উপযোগ ৯ টাকা । ২য় আম থেকে প্রাপ্ত প্রান্তিক উপযোগ ৪ টাকা । এভাবে ৪টি আম থেকে প্রাপ্ত উপযোগ ১৪ । ৪র্থ আমের প্রান্তিক উপযোগ ২ । এভাবে আমের বিভিন্ন একক থেকে প্রান্তিক উপযোগ যথাক্রমে ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০ ও ১ টাকা । ৬ষ্ঠ আমটির তোমার কাছে কোনো উপযোগ না থাকায় তুমি তা কিনবে না। আর ৭ম আমটি কিনলে তোমার মোট উপযোগ তখন কমে যাবে,যেহেতু ৭ম আমের প্রান্তিক উপযোগ ঋণাত্মক ।
আরও পড়ূনঃ