মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) পরিমাপ পদ্ধতিসমূহ—উৎপাদন, আয় ও ব্যয় পদ্ধতি আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি” এর “জাতীয় আয় ও এর পরিমাপ” ষষ্ঠ অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) পরিমাপ পদ্ধতিসমূহ—উৎপাদন, আয় ও ব্যয় পদ্ধতি
১. উৎপাদন পদ্ধতি (Production Approach): একটি দেশের অর্থনীতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিভক্ত । এসব খাতে এক বছরে উৎপাদিত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবার মূল্য যোগ করে মোট দেশজ উৎপাদ নির্ধারণ করা হয় । বাংলাদেশে অর্থনীতিকে ১৫টি খাতে বিভক্ত করা হয় এবং খাতওয়ারি উৎপাদনের মূল্য নির্ধারণ করা হয় । পরিশেষে ১৫টি খাতের উৎপাদনের মূল্য যোগ করে মোট দেশজ উৎপাদন নির্ধারণ করা হয় ।
২. আয় পদ্ধতি (Income Approach) : এ পদ্ধতিতে মোট দেশজ উৎপাদন হলো উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত উপকরণসমূহের প্রাপ্ত আয়ের সমষ্টি । উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত মৌলিক উপকরণ ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন। এদের প্রাপ্ত আয় যথাক্রমে খাজনা, মজুরি, সুদ ও মুনাফা। অতএব মোট দেশজ উৎপাদন = খাজনা + মজুরি + সুদ + মুনাফা ।
৩. ব্যয় পদ্ধতি (Expenditure Approach) : এ পদ্ধতিতে জিডিপি হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সমাজের সব ধরনের ব্যয়ের যোগফল । সমাজের মোট ব্যয় বলতে ব্যক্তি খাতের ভোগ ও বিনিয়োগ ব্যয় এবং সরকারি ব্যয় ও নিট রপ্তানিকে বোঝায় । অতএব, ভোগ + বিনিয়োগ + সরকারি ব্যয় + নিট রপ্তানি (= রপ্তানি – আমদানি) = মোট দেশজ উৎপাদন। মোট -দেশজ উৎপাদন বা Y= C + I + G + (X-M) এখানে C = ভোগ, I = বিনিয়োগ, G = সরকারি ব্যয়, (X-M) (রপ্তানি – আমদানি) = নিট রপ্তানি ।
উপরিউক্ত তিনটি পদ্ধতিতে পরিমাপকৃত মোট -দেশজ উৎপাদন মোটামুটি কাছাকাছি হলে পরিমাপ সঠিক হয়েছে বলে ধরা হয়। গণনা বা হিসাবের ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে খানিকটা পার্থক্য হতে পারে, তবে প্রকৃত অর্থে তা একই ফলাফল বহন করে ।
মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (Per Capita Gross Domestic Product)
মাথাপিছু জিডিপি বলতে জনপ্রতি বার্ষিক জিডিপিকে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে দেশের মোট -দেশজ উৎপাদনকে উক্ত বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলেই মাথাপিছু জিডিপি পাওয়া যায় ।
সূত্রাকারে, মাথাপিছু জিডিপি = কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) /ঐ বছরের মধ্য সময়ের মোট জনসংখ্যা

মাথাপিছু জিডিপি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানের গড় প্রধান সূচক । বিশ্বব্যাংকের ধ্যানধারণা অনুসারে এ সূচক দ্বারা দেশটি কি উন্নত নাকি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল তা নির্ণয় করা যায় । যদি মাথাপিছু জিডিপি একটি নির্দিষ্ট স্তরের বেশি হয় তবে বুঝতে হবে দেশটি উন্নত, আর যদি তা থেকে কম হয় তবে বুঝতে হবে দেশটি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল । তবে বর্তমানে এ ভাবে না দেখে উচ্চ আয়ের দেশ, মধ্যম আয়ের দেশ এবং নিম্ন আয়ের দেশ হিসাবে দেখার রীতি চালু হয়েছে।
আরও পড়ূনঃ
- এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি
- যমুনা লাইফের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ | সারা সপ্তাহের খবর