বিভিন্ন খাতের আপেক্ষিক গুরুত্ব আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়। এই পাঠটি “এনসিটিবি মাধ্যমিক ৯ম ও ১০ম শ্রেণির অর্থনীতি” এর “বাংলাদেশের অর্থনীতি” অষ্টম অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত।
বিভিন্ন খাতের আপেক্ষিক গুরুত্ব
উৎপাদন ভিত্তিতে নিরূপিত আমাদের দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) ১৫টি খাত নিয়ে গঠিত । খাতসমূহ কৃষি, শিল্প ও সেবা-এ তিনটি বৃহৎ খাতে বিভক্ত । বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তির একটি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি,কেননা এ দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠেছে কৃষি কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে । বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি কৃষির অগ্রগতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত । কিন্তু কৃষি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল বলে তা স্থিতিশীল অর্থনীতি নির্দেশ করে না ।
কারণ এ দেশে প্রতিবছরই বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও খরা ইত্যাদি নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন অনিশ্চিত থাকে। তাই বর্তমান মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে শিল্পায়িত অর্থনীতি গড়ে তোলা প্রয়োজন । কেননা শিল্পায়নের মাধ্যমে কৃষি আধুনিকীকরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
কৃষি ও শিল্প খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি সার্বিক সেবা খাতের বিভিন্নমুখী কার্যক্রম, যেমন শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে তোলা, নারী ও শিশু উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, ক্রীড়া উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন করে বর্তমান সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব ।
এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কৃষি খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাপক সরকারি সহায়তা যেমন পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান, সেচের জন্য নরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কৃষিঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি, প্রতিকূল আবহাওয়া ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু বীজ উদ্ভাবন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশে সহায়তা প্রদান প্রভৃতি কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে । সার্বিক সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সবগুলো খাতই মোটামুটি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখায় এ খাতের প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।
নিচের লেখচিত্রে বৃহৎ খাতভিত্তিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার উপস্থাপন করা হলো :
তালিকা থেকে বোঝা যায় যে আমাদের জিডিপিতে সাধারণ ভাবে প্রধান অবদান রাখছে সেবা থাক (প্রায় ৫৪ শতাংশ)। তার পরেই রয়েছে শিল্প খাতের অবদান (প্রায় ৩০ শতাংশ)। সবসের কম এবং ক্রাान অবদান রাখছে কৃষি খাত প্রায় ১৬ শতাংশ।
কৃষি ও শিল্প খাতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা
রমিজ একজন ধনী কৃষক। তিনি অদিতে উচ্চ ফলনশীল পান চাষ করেন, গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করেন এবং প্রয়োজনীয় জৈব সার ব্যবহার করে অধিক ধান উৎপাদন করেন। উৎপাদিত বান-পা আঁশ দিয়ে তৈরি বভার করে বাজারে সরবরাহ করেন। অনেকেই ঐ ধান জন্ন করে তাদের খাদ্যের অভাব পূরণ করেন। উপরের মনুজেল থেকে আমরা বলতে পারি, কৃষি খাতে ও সাজের যোগান দেয় শিল্পর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আসে কৃষি খাত থেকে।
বাংলাদেশে কৃষি ও শিল্প খাতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা নিচে আলোচনা করা হলো আমাদের দেশের অধিকাংশ শিল্প কৃষিভিত্তিক। এ দেশের উল্লেখযোগ্য শিল্প যেমন- পাট, চা, চামড়া, চিনি কাগজ প্রভৃতি শিল্প প্রধান কাঁচামালের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের দেশে ফোন ফোন শিল্পায়ন ঘটে, যেমন- ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পাট শিল্প। চট্টগ্রাম ও সিলেট উচ্চৱৰলে চিনিশিল্প গড়ে উঠেছে। এসব শিজোর প্রসারের ফলে কাঁচামালের বর্ধিত চাহিদার কারণে কৃষি উৎপাদন বাড়বে, কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে। ফলে কৃষকদের আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ।
জনগণের আয় বৃদ্ধির ফলে সঞ্চয় ও মূলধন গঠন বৃদ্ধি পাবে এবং শিল্পক্ষেত্রে বেশি করে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে । আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পের ভিত্তি হলো কৃষি। কৃষিতে উৎপাদিত বাঁশ-বেত ক্ষুদ্র শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে শিল্পে উৎপাদিত চাষাবাদের যন্ত্রপাতি, সার, কীটনাশক, ওষুধ ইত্যাদি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয় । তাই শিল্পজাত দ্রব্যের বাজার সৃষ্টিতে কৃষি ভূমিকা পালন করে । কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পজাত অন্যান্য দ্রব্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়, যা শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

কৃষির আধুনিকায়নের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারলে আমদানি ব্যয় বাঁচবে, যা শিল্পোন্নয়নে ব্যয় করা যাবে । উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, আমাদের কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন পরস্পর নির্ভরশীল এবং একে অপরের পরিপূরক । তাই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের জন্য দুটি খাতের একই সঙ্গে উন্নতি একান্তভাবে কাম্য ।
আরও পড়ূনঃ